রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাটিরাঙ্গার অপরাধ আখড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ( QD’S ) সিসা লাউঞ্জের নামে চলছে ব্ল্যাকমেইলসহ মাদক বাণিজ্য। কালের খবর গ্যাস সরকারি, বিল যাচ্ছে দালালের পকেটে মুরাদনগরে বজ্রপাতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু। কালের খবর কুতুবপুর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যানের প্রয়াত বাবার দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী: শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে চলছে ৩ দিনের জন্মোৎসব। কালের খবর সাতক্ষীরা জেলায় এবার ২৫০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা। কালের খবর ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। কালের খবর হজযাত্রা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালের খবর সাতক্ষীরায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত দেখা দিয়েছে জনমনে স্বস্তি। কালের খবর
ভূমিহীন পরিচয়ে সরকারি জমি লিজ নিয়ে হোটেল ব্যবসা করছেন আওয়ামী এমপি আয়েশা ফেরদাউস!। কালের খবর

ভূমিহীন পরিচয়ে সরকারি জমি লিজ নিয়ে হোটেল ব্যবসা করছেন আওয়ামী এমপি আয়েশা ফেরদাউস!। কালের খবর

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল,  কালের খবর  :

বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, বিপুল পরিমাণ জমি সবই আছে। তবু তিনি সরকারের খাতায় নিজেকে ভূমিহীন পরিচয় দিয়েছেন। শুধু তিনি একা নন, তার পরিবারের সব সদস্যই ভূমিহীন। পরিচয় গোপন করা মানুষটি অন্য আর দশজন সাধারণের মতো কেউ নন। তিনি একজন সংসদ সদস্য। তিনি নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস। তার স্বামী একই আসনের সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী। বর্তমান ও সাবেক এই দুই সাংসদ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তাদের নিজ নামে ভূমি বন্দোবস্ত নেয়ার পাশাপাশি দুই ছেলে, কন্যা ও পুত্রবধূর নামে ভূমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ভূমিহীনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগ বন্দোবস্ত নেয়া খাস জমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করেছেন। উপজেলা ভূমি অফিসও অবৈধ ভবনটি অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের দিকে নদীভাঙনের কবলে পড়ে ভূমিহীন পরিবারের লোকজন হাতিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হাতিয়া বাজারের ভূমি অফিস সংলগ্ন বিশাল এলাকায় বসবাস করছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওই জমি থেকে প্রথমে প্রকৃত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে জায়গাটি দখলে নেয় এমপি পরিবার। এরপর ভূমি অফিসের মাধ্যমে এক বছরের জন্য জমিটি লিজ নেয়। ভূমিহীন পরিচয়ে বন্দোবস্ত নেয়া জমিতে বর্তমানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে হোটেল ব্যবসা শুরু করছে এমপির পরিবার।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভূমি বন্দোবস্ত কমিটির বৈঠক করে স্বামী, স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূর নামে অর্ধ ডিসিমেল করে ৬টি নথিসহ মোট ১০টি নথি পাস করিয়ে বিপুল পরিমাণ জমি বন্দোবস্ত করে নেয় এমপি পরিবার। উপজেলা পরিষদের রেজুলেশন নম্বর অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাংসদ আয়েশা ফেরদৌসীর নামে বন্দোবস্ত দেয়া নথি নম্বর ১৮৬। তার স্বামী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীর নথি নম্বর ১৯৩, ছোট ছেলে মাহতাব আলীর বন্দোবস্ত নথি নম্বর ১৮১, বড় ছেলে আশিক আলীর নথি নম্বর ১৮২, মেয়ে সুমাইয়া আলীর নামে বরাদ্দকৃত নথি নম্বর ১৮৩ ও পুত্রবধূ নাঈমা সুলতানার নথি নম্বর ১৯৪।
অথচ এমপি আয়েশা ফেরদৌসী সর্বশেষ তার নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় নিজের জমি, বাড়ি ও ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা থাকার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল করিম বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে এমনটি ঘটেনি। এর আগে হতে পারে। তবে ভূমি আছে এমন কাউকে ভূমিহীন দেখিয়ে বরাদ্দ দিয়ে থাকলে তা বরাদ্দ কমিটির দায়িত্ব নিতে হবে।
ভূমি অফিস সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্থানীয় সাংসদ আয়েশা ফেরদাউস ও তার স্বামী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে উপজেলার বয়ারচর হাতিয়া বাজারের স্থানীয় ভূমি অফিস সংলগ্ন বিশাল একটি জায়গা নিজেদের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য আবেদন করেন। এ সময় তিনি স্থানটিকে কৃষি খাস জমি হিসেবে ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দিতে জোর প্রভাব খাটান। পরে উপজেলা ভূমি অফিস জায়গাটি একসনা ভিত্তিতে তার পরিবারের সদস্যদের নামে বন্দোবস্ত দেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে এই সাংসদ পরিবার জায়গাটি পাঁচতলা ভবন তৈরি করে কন্যা সুমাইয়া আলী ইশিতার নামে ‘ইশিতা আবাসিক হোটেল’-এর ব্যবসা শুরু করেন।
স্বামীর ভাই সাইফুর রহমান চৌধুরী ও ফরিদুজ্জামানকে ভূমিহীন দেখিয়ে জমি বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। যার নথি নম্বর ১৮৪/২০১৫-২০১৬ ও ১৮৫/২০১৫-২০১৬। এ দুজনের বাবার নাম ফজলুর রহমান চৌধুরী, যা এমপি আয়েশা ফেরদাউসের বাবা হিসেবেও তার নথিতে উল্লেখ রয়েছে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। কিন্তু তাদের হাতিয়া এলাকায় ভূমিহীন দেখানো হয়েছে। এমপি ও তার পরিবারের লোকজন নিজেদের উপজেলা সদরের ঠিকানার পরিবর্তে চরের একটি নির্জন এলাকা কাজিরটেক ব্যবহার করেছেন। আবার এমপি আয়েশা ফেরদাউস নিজের স্বামীর নাম ব্যবহার না করে বাবার নাম আর পুত্রবধূ নাইমা সুলতানা নিজের স্বামীর না ব্যবহার না করে বাবার নাম রফিকুল ইসলাম ব্যবহার করেছেন।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মাহবুবুল আলম তালুকদার বলেন, ‘উনারা (সাংসদ ও তার পরিবার) তো ভূমিহীন পর্যায়ে পড়ার প্রশ্নই উঠে না। এখন কীভাবে বরাদ্দ হলো তাও তো জানি না। তথ্য গোপন করে বা কেউ বরাদ্দ নিলে তা বাতিল করে থাকি। এ বিষয়েও তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাংসদ আয়েশা ফেরদাউসের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি। পরে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com